
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের জেরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন ছাত্ররা। বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে শাবল-হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর চালায়, দুইতলায় দেওয়া হয় আগুন। পরে আনা হয় বুলডোজার, শুরু হয় ভাঙা।
বুধবার রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ হয়। গভীররাত পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির একাংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে অবস্থান করছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ আখ্যা দিয়ে ওই বাড়িতে হাজার হাজার লোক জড়ো হন। পরে তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে বাড়িটি ভাঙচুর শুরু করেন। উত্তেজিত জনতা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া দাবি জানাচ্ছেন উত্তেজিত জনতা। ‘আজাদি না গোলামি, আজাদি আজাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’— এরকম নানা স্লোগানের প্রকম্পিত ৩২ নম্বরের সড়কটি।
রাত যত বাড়তে থাকে, দলে দলে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটির সামনে এসে জড়ো হতে থাকে। যুবক, কিশোর, নারী-পুরুষসহ বয়স ধর্মবর্ণনির্বিশেষে রীতিমতো মানুষের ঢল নামে এ সড়কটিতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনগণকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে মানুষ আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সেনাসদস্যরা ধানমন্ডির মূল সড়কে অবস্থান নেন। পরে রাত ৯টা ৫৮ মিনিটের দিকে তারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের আয়োজনে ছাত্রসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বুধবার রাত ৯টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবে বলে সোশ্যাল মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও এ তথ্যটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। এ খবরের পর ফ্রান্সে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে লাখ লাখ মানুষকে যাওয়ার আহ্বান জানান।
নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কাডাল রানী লাইভে যাবে যখন, তখন সবাই যান ৩২ নম্বরে। বাকি কাম সাইরা আইসেন এইবার। লাখ লাখ মানুষ আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। আওয়াজ তোলেন থাকবে না, ৩২ নম্বর থাকবে না।’ এ আহ্বানের পর ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ নামে একটি কর্মসূচি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ শিরোনামে একটি পোস্টার ফেসবুকে পোস্ট করে বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন লেখেন, আপার বক্তব্যের তালে তালে বুলডোজার চলবে।
এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহও। সন্ধ্যায় কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আজ রাতে ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ তার এমন ঘোষণার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের এ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।