
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। তারা বলেন, যারাই তার বিচারের আগে নির্বাচনের চাইবে, তাদের জাতীয় শত্রু-বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
মহান বিজয় দিবসে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীতে ‘বিজয় র্যালি’ শেষে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আগামী দিনে যারাই বিচারের আগে নির্বাচনের পাঁয়তারা করবে, তাদেরকে জাতীয় শত্রু ও বেইমান হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বুলেট ক্রস করেছি। আগামী দিনে ব্যালটের রেভল্যুশন (নির্বাচন) আসলে সেটিও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তবে সেটা বিচারের আগে নয়; বিচার হবে, এরপর নির্বাচন।’
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসের সুযোগ দেওয়া হবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, সামনে দুটি শত্রু; একটি মুজিববাদ, আরেকটি হিন্দুত্ববাদ। এই দুই শক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় মোকাবিলা করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘একাত্তরে শেখ মুজিব পারিবারিক মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের স্বপ্ন বিসর্জন দেন, সার্বভৌমত্বকে ভারতের কাছে লিজ দেন। সেই মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা গত ১৬ বছর নাগরিকদের হয় দালাল, নাহয় দাস বানিয়েছেন। এত দিন নাগরিক হয়ে উঠতে দেয়নি। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর নাগরিক হয়ে ওঠার সুযোগ এসেছে।
সমাবেশ সঞ্চালনার সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দ্রুত প্রতিবাদ জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয় উল্লেখ করে ফেসবুকের একটি পোস্ট দিয়েছেন।
বাংলার মাটিতে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ওপর বারবার যারা হামলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যেখানে হামলা হবে, সেখানেই লড়াই হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক নিজামউদ্দিন ও কেন্দ্রীয় সংগঠক আলী নাসের খান।
সমাবেশের আগে মিছিলে জাতীয় নাগরিক কমিটির হাজারো নেতা, কর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি ছিলেন। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, অনেকে মাথায়ও জাতীয় পতাকা বাঁধা ছিল। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর মধ্যে ছিল ‘একাত্তর মরে না, চব্বিশ হারে না’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।