
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারপর থেকে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকা সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগ্রহী নয়াদিল্লি।’
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। পরে বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সাংবাদিকদের অবহিত করে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় চিন্তা নেই উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি আমরা। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই।’
ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।’
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘খুবই দৃঢ়’ এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে জমেছে। এই কালো মেঘ মুছে ফেলতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের ‘নির্মম ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের’ বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন। কারণ, শেখ হাসিনা ভারতে থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।’
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কীভাবে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে, তার বর্ণনা দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।’ এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর অভ্যর্থনা জানানো বিদেশি নেতাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের সারিতে আছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের ‘ন্যারেটিভ’ এবং মোদি সরকারের ধারণা ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি।’
বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কের ধারণা ‘ভুল’ দাবি করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং সকলের জন্য।’
বৈঠকে বন্যা এবং পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগে ভারতকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যত গড়তে চাই।’
বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত সার্কের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু বাধা রয়েছে।
সংখ্যালঘু ইস্যু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভারত গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে। আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।