অদলীয়রাজনীতি
ট্রেন্ডিং

শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দেয়নি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহতরা নির্বাচনের জন্য প্রাণ দেয় নাই দাবি করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।

তিনি বলেছেন, তারা দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দেয় নাই। তারা প্রাণ দিয়েছে দেশের মানুষের রুটি-রুজি, কর্মসংস্থানসহ মৌলিক অধিকারের জন্য। তারা যদি অধিকার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব না পায় তাহলে হাজার হাজার নয় লক্ষ-কোটি মানুষের মৃত্যু হবে আবার। সেদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর ২০২৪) রাজধানীর বারিধারায় সিরাজুল আলম আলম খান সেন্টার ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আবদুর রব বলেন, আমরা কারও দেশ দখল করতে চায় না। কিন্তু নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রশিক্ষণটা নিতে হবে। উৎপাদনমুখী সেনাবাহিনী থাকতে হবে। জমিতে কৃষি কাজ করবে কিন্তু প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাব।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১৮ বছরের যুবক-যুবতীদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি জানান স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক।

তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খানের ‘১৪ দফা খ্যাত নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা’ছাত্র-জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। ভবিষ্যতে যেকোনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিরোধে ইহা সুস্পষ্ট রূপরেখা।

রব বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে জাতিসত্তার পরিচয় দিতে পারতাম না। তা না হলে আমাদের পরিচয় হতো ভারতীয় বাঙালি কিংবা পাকিস্তানি বাঙালি।

তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াস করেছিলেন। মাওলানা ভাসানী হতে শুরু করে কমরেড ফরহাদসহ প্রত্যেকটা নেতার কাছে তিনি গিয়েছিলেন। প্রত্যেকটা আন্দোলনকে বাংলাদেশের সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে কীভাবে ধাবিত করা যায় তাই তিনি করেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন। সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সংগঠন করেছেন। সেটাকে বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধ করে জয়লাভ করেছেন বিএলএফের মাধ্যমে।

সিরাজুল আলম খান সম্পর্কে গবেষণা হলে বাংলাদেশের ইতিহাস চলে আসবে উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম।

তিনি বলেন, সেখানে অনেকের নাম চলে আসবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটাও চলে আসবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকেন তারা ইতিহাস নিজেরা নিজেরাই লেখেন। মনে করে তারা যেটা বলবে সেটাই ইতিহাস। যেটা দেখেছি বিগত সরকারের আমলে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির দোহাই দিয়ে সিরাজুল আলম খানকে ছোট করেছেন। শেখ হাসিনা সরকার হতে পারেন কিন্তু সিরাজুল আলম খানের কাছে তিনি নস্যি।

প্রথিতযশা চিন্তক ও লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বিগত সরকার দেশের সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করে এক দলীয় ও এক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। সেই জন্য আজকে তাদের খুদে বুদ্ধিজীবীদেরও পলাতে হয়েছে। কারণ তারা জানে তাদের নৈতিক শক্তি নেই। আমরা যেন সেটি না করি।

আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আজকে অনেকেই চেষ্টা করছে হীন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তারা আবার নির্লজ্জভাবে ক্ষমতায় আসার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। তাতে তারা ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। পৃথিবীর যে লোকই রক্তারক্তি করতে পারে। সেই রক্তারক্তির ফলাফল কারও জন্য ভালো হয় না। আমরা সুপার পাওয়ার নই, অনেক দিক বিবেচনা করে চলতে হয়। কিন্তু আত্মমর্যাদাতো বিকিয়ে দিতে পারি না।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমাদের প্রতিবেশীও অন্যান্য দেশ থেকে যে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে সেখানে আমাদের সিভিল সোসাইটির ব্যর্থতা আছে। শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের সমর্থন দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। গণ আন্দোলনে যে সরকারের পতন হয়েছে সেটা সারা পৃথিবীতে প্রচার করতে পারছি না। সিরাজুল আলম খান সেন্টার ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট সম্পর্কে তিনি বলেন, এই কেন্দ্র একদিন আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, এবারের বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থান মানুষকে আশাবাদী করেছে। সাড়ে তিন শ-চারশ বছর আগে পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র ছিল বাংলা। এখানে বড় হওয়ার সব সম্ভাবনা বিদ্যমান। সেই বাস্তবতা সিরাজুল আলম খান দেখিয়েছেন, একটা শোষণহীন, ভাগ্যহত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই অধিকার বাস্তবায়ন হবে।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ১৪ দফার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার একটি নতুন কাঠামো তৈরির দিকনির্দেশনা রয়েছে এতে। পাশাপাশি, সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার বিষয়টিও এতে অগ্রাধিকার পেয়েছে। এই কর্মসূচি শুধু স্বাধীনতার আদর্শের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষারও মূর্ত প্রতিফলন।

সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল আলম খান সেন্টার- এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রায়হানুল ইসলাম বলেন, এই সেন্টার সকল ধরনের জ্ঞান চর্চা, অর্থনীতি, কৃষ্টি, শিক্ষা, সাহিত্য, মানবিক ও পরিবেশ এর উপর আলোচনা, সেমিনার করবে।তিনি আরোও বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ও বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, যুব বাঙালির কেন্দ্রীয় সংগঠক কাজী মাহতাব উদ্দিন তানসেন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button