জাতীয়সরকার
ট্রেন্ডিং

সাম্প্রদায়িক হামলার ঐক্য পরিষদের দাবি মিথ্যা

ছাত্র-জনতার গণভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের (৫ আগস্ট) পর সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মিথ্যা তথ্য চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। একই সঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে ঐক্য পরিষদে আরও বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। তাদের দাবি সঠিক নয় দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সংহিসতায় নিহত দাবি করা ২৩টি ঘটনার বাস্তব কারণ জানতে অধিকরত তদন্তের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং উল্লিখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে। ওই তালিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

তিনি জানান, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। উল্লিখিত ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া পায়নি পুলিশ। যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে তারমধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই। হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটি ক্ষেত্রে জেনারেল ক্রাইম যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পানে মৃত্যু এবং বিদ্রুপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামরি থেকে মৃত্যু, দুইটি দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু, দুইটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটিতে স্থানীয়দের সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু, একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং একটি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই বলে পুলিশ সরকারকে জানিয়েছে। এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান।

এই প্রত্যেকটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ২৩ ঘটনার দুটোতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটি পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৭জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশের তদন্তের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আলামত পাওয়া যায়নি জানিয়ে উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে। এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সব পক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোন ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একই সঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচরণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সকল পক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।

ঐক্য পরিষদের এ ধরনের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র কি-না জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সাম্প্রাদায়িক সহিংসতা পুলিশ যেভাবে তদন্ত করে এসব ঘটনার ওইভাবে তদন্ত করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তদন্ত করে দেখা হোক সাম্প্রদিক সহিংসতা আচে কি না। ঐক্য পরিষদকে আহ্বান করেছি তারাও পরবর্তীতে বিষয়গুলো সঠিকভাবে দেখেন।

তারা বলেছে, বেশিরভাগ তথ্য গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। আমরা খতিয়ে দেখিয়েছি কোন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনাগুলোকে সাম্প্রদায়িক ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করা হয়নি, সেটাকে জেনারেল ক্রাইম হিসেবে দেখা হয়েছে। তাদের কাছে আহ্বান তারা যেন নিবিড়ভাবে দেখে প্রকৃত সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button