জাতীয়সরকার
ট্রেন্ডিং

ফেব্রুয়ারিতে সংলাপ, এক মাসে রোডম্যাপ

রাষ্ট্র সংস্কারের ৬ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে। তারপর সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ ফ্রেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শুরু হবে। সেখানে মতৈক্যের ভিত্তিতে সংস্কারের একটা রোডম্যাপ আগামী এক মাসের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বলে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ কবে নাগাদ হবে, জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমার ধারণা, যেহেতু কমিশন প্রধানেরা এক মাস সময় চেয়ে নিয়েছেন নিজেরা বসে প্রাধান্যগুলো ঠিক করতে। আমার ধারণা, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কিন্তু এক ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তারা তাদের লিখিত মতামত দিয়েছেন।

তবে সংস্কার কমিশনের কাজ আগে শেষ হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানান আসিফ নজরুল।

সংস্কার কমিশন প্রধানেরা স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন উর্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তারা এখন বসে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, কোথায় কোথায় প্রাধান্য দেওয়া উচিত সেগুলো ঠিক করবে। এ জন্য বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশনগুলোর কাজের সময়টা আরও এক মাস বাড়ানো হবে। আর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ৬টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আপনারা (সাংবাদিক) পেয়ে যাবেন। প্রতিটি কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, এখন সমন্বয়ের কাজটা করবে।

একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু দাবি আছে, অন্যদিকে জনগণেরও কিছু দাবি আছে, সেগুলো নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোডম্যাপটা কী হবে তা এক মাসের মধ্যে দিতে সক্ষম হবো বলে আমরা মনে করি।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার কনটেক্সটা যেন আমরা ভুলে না যাই। একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এখন যদি আমাদের সব কিছু একটা আইনি কাঠামো ধরে বলা হয় যে, সংবিধানে এটা আছে, আপনাকে এটা করে করতে হবে…। এই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা, আকাঙ্খা এপ্রেস করা আমাদের জন্য দুরুহ হয়ে পড়ে। আমরা গণঅভ্যুত্থানকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করেছি।

তিনি বলেন, এই সংস্কারের ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে, কাউকে বারণ করা হয়নি। চারটি সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে সব দলের লিখিত বক্তব্যের প্রতিফলন করেছে যতটুকু তারা প্রয়োজন মনের করেছেন। এটাই কিন্তু শেষ নয়, কয়েকটি ফেসে আলোচনা কবে। রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে, সেটি প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করেছেন। আমরা আশা করি পলিটিক্যাল কনসানসাস আসবে, তখন আর লেজিটেমিসি না থাকার কোনও প্রশ্ন থাকছে না। এমনিতেও লেজিটেমিসি না থাকার কোনও কারণ নেই। কারণ, বড় রকমের গণঅভ্যুত্থানের ফলেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বাহাত্তুরের সংবিধানের কবর দেওয়ার ঘোষণার প্রেক্ষিতে সংস্খার কমিশন সংবিধান বাতিল নাকি সংস্কারের কথা বলে, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা কন্টেন্টের ব্যাপারে কিছু বলবো না। আপনারা ওয়েবসাইটে পাবেন, কমিশনের প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আর রাজনৈতিক বক্তব্য যেকোনো দল দিতে পারে, সেটা যদি কমিশন বলে, সরকার বলে তখন আমাদের প্রশ্ন করবেন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, বিচারের কার্যক্রম অত্যন্ত সাবলীলভাবে চলছে। আমরা বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি— আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর। এখানে রাষ্ট্রপক্ষের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে আমরা এটাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যেই গতিতে মামলার তদন্ত কাজ চলছে, আশা করছি— আগামী মার্চ থেকে শুনানি শুরু হতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের আশা-বিশ্বাস আছে, যেই গতিতে এগুচ্ছি ইনশাআল্লাহ সামনের নির্বাচনের আগে অন্তত ট্রায়াল কোর্টে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। এখানে কারো কোনো প্রকার গাফিলতি নাই, আপনাদের কাছে আমাদের প্রতিজ্ঞা অবশ্যই বাংলাদেশে যে নির্মম অমানবিক গণহত্যা হয়েছে সরকার তার বিচার করবে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কাউকে টার্গেট করে বিচার হচ্ছে না। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে বিচার হচ্ছে। আমরা যেহেতু কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করিনি, কাজেই রাজনীতিতে কোন দল কোন অবস্থানে কীভাবে থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত সেই রাজনৈতিক দল নেবে। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর নির্ভর করছে না।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জন্য দেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলকে শাস্তি দেওয়ার কথা সংবিধানে রয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা করিনি, আমরা করবো না সে রকম কোনও কথা না। আমরা বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। সুষ্ঠভাবে বিচার হওয়ার পর আমরা গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে দলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যে রায় পাবো তার আলোকে বহু সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে, সেই সুযোগ আমরা পাবো।

যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, সংস্কার কমিশনের কাছে মানুষ সতসর্ফর্তভাবে মতামত দিয়েছেন, মানুষ সংস্কার চায়—  এটা খুবই আশাব্যঞ্জক। মানুষের আকাঙ্খাকে কমিশনগুলো এড্রেস করেছে, এগুলো প্রতিবেদনে এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের কাঠামোগত সংস্কারে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা সেটা বাস্তবায়ন হবে। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে আমরা সংস্কার আনতে পারবো। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিবো। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষের সহযোগিতা চাই আমরা।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button