
জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের তদন্ত দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু সাঈদের বিশেষ ঘটনাটি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে দু’বাহু ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে চিৎকার করার সময়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল।
ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র ও ভূ-অবস্থান প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটে, তা সাক্ষ্য-প্রমাণের জন্য পুনর্নির্মাণ করেন তদন্তকারীরা। জাতিসংঘ বলছে, একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, তার আঘাতগুলো প্রায় ১৪ মিটার দূরত্ব থেকে ধাতব গুলিভর্তি শটগান দিয়ে কমপক্ষে দুবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু সাঈদ পুলিশের ‘ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে’।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেন, এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।
তুর্ক বলেন, আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধও গঠন করতে পারে। জাতীয় নিরাময় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়বিচার অপরিহার্য।