
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথা বললেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪) সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে আয়োজিত অভিভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া অভিভাষণে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বার্থে মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন আবশ্যক। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের বিচারকগণ বিচারকার্যের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “কিন্তু বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা তত দিন পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না, যত দিন বিচার বিভাগের বিরাজমান দ্বৈত ব্যবস্থা, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার জরুরি ভিত্তিতে বিলোপ করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা না হবে। এটি হবে বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রথম ধাপ।”
তিনি বলেন, “বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। শঠতা, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগের সবচেয়ে শক্তির জায়গা হচ্ছে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। তাই নতুন এই বাংলাদেশে আমরা এমন একটি বিচার বিভাগ গড়তে চাই, যা সততা ও অধিকারবোধের নিরাপদ দুর্গে পরিণত হবে।”
তিনি বলেন, “কোনো সন্দেহ নেই, বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকরভাবে পৃথক না হওয়া। এর কুফল আমরা সবাই ভোগ করেছি গত দেড় দশক ধরে। এ জন্য বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ও স্বাধীন করা সবচেয়ে জরুরি।”
“স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, মামলার অনুপাতে বিচারকের স্বল্পতা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাবের ঘাটতি, অবকাঠামোগত সংকট, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকা, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতিতে আইন না থাকা, যা আমাদের বারবার পিছিয়ে দিয়েছে”- যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।