
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলন যোগ দিতে চার দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সফরে ডাব্লিউইএফের সম্মেলনের পাশাপাশি অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব ইভেন্টের সময় কমপক্ষে ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, ডব্লিউইএফ সম্মেলন কেন্দ্রিক চার দিন খুব ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বেশ কয়েকজন সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৪৭টি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে চারজন সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান, চারজন মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তি, জাতিসংঘ বা সদৃশ সংস্থার ১০ জন প্রধান বা শীর্ষ নির্বাহী, ১০ জন সিইও বা উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব, ৯টি নৈশভোজ ও মধ্যাহ্নভোজ, ৮টি মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা এবং আরও দুটি অনুষ্ঠানের সাথে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ২১ জানুয়ারী ডাভোসে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা এবং সাতটি ইভেন্টে অংশ নেন। সফরের প্রথম দিনে শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি জোসে রামোস-হোর্তা, মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসজেন, থাই প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্যান্ডি এবং ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাবের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
দ্বিতীয় দিন প্রায় ১৪টি প্রোগ্রাম এবং অনেক পার্শ্ব ইভেন্টে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যনির্বাহী মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখা লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি, প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টার্কসহ অন্যান্যদের সাথে ডব্লিউইএফ-এ বৈঠক করেন তিনি।
এদিন অধ্যাপক ইউনূস শীর্ষ সম্মেলনের সময় ‘জলবায়ু ও প্রকৃতির অবস্থা’ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন এবং ডাভোসের একটি হোটেলে সামাজিক উদ্যোক্তাদের শোয়াব ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
তৃতীয় দিন ১৪টি নির্ধারিত অনুষ্ঠান এবং অনেক পার্শ্ব কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেডের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ, সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক গ্লোবাল লজিস্টিকস প্রোভাইডার ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম, অধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড, ডেনিশ শিপিং ও লজিস্টিক কোম্পানি এ.পি. মোলার-মারস্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মারস্ক উগলা এবং বিশ্বব্যাংকের অপারেশনস বিভাগের এমডি আনা বিজের্ডের সাথে বৈঠক করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ডব্লিউইএফ শীর্ষ সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের একান্ত বৈঠকে যোগ দেন এবং বৈঠকের ফাঁকে ডাভোসের ক্লাইমেট হাবে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন।
সফরের শেষ দিন সাতটিরও বেশি অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শীর্ষ সম্মেলনের সময় আমেরিকান বিনিয়োগকারী রে ডালিও, মারিনো ম্যানেজমেন্ট ও ডালিও ফ্যামিলি অফিসের প্রতিষ্ঠাতা এবং জেনেল গ্রুপের (রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কোম্পানি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আমের আলীরেজা প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেন।
সরকারি সফর শেষ করে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং শনিবার (২৫ জানুয়ারী) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।