
গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনের এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার সঠিক সময় মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার এখনই সেরা সময়।
রবিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে অক্সফামের ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, এখন প্রশ্ন করতে পারেন, প্রশ্ন করার সঠিক পরিবেশ আছে কিনা? প্রশ্ন করার গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা আছে কিনা? আমি সরকারের পক্ষ থেকে বলতে পারি, গত পাঁচ মাস ধরেই আমরা বলছি, প্রশ্ন করার এখনই সময়।
গত ৫ মাসে নিরাপত্তা এজেন্সি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে কিংবা আইন প্রয়োগ করে কোনও প্রকার বাধা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারও অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করবো। এখন গণমাধ্যম অকল্পনীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে। এখন আমার সমালোচনা করতে পারেন, প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি উপদেষ্টাদেরও সমালোচনা করতে পারেন।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে স্বাধীন গণমাধ্যম প্রয়োজন মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, আমরা সেজন্য যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি, যাতে যে কেউ যেকোনও সংবাদ ভীতি ছাড়াই প্রকাশ করতে পারে। আমরা এখন এমন একটা সময়ে আছি যখন আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ছাত্র-জনতা সবাই প্রশ্ন তুলছেন।
তিনি বলেন, আমরা সঠিক পথে আছি কিনা, গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিচ্ছি কিনা, গণতন্ত্রকে স্যাক্রিফাইস করে উন্নয়ন কতদূর টিকবে— এই ধরনের প্রশ্ন এখন সর্বত্র করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এটা আমাদের বেশ ভালো লেগেছে।
গত কয়েক দশক ধরে পরিবেশের ক্ষতি করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, প্রতি বছর নদীগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে নতুন করে। এই মুহূর্তের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৪টি নদীই দূষিত। নদী দূষিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে দূষণ এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কয়েক বছর পর আমাদের সন্তানরা এখানে বাস করতে চাইবে না।
একটা লবিং গ্রুপকে এখনও প্রশ্ন করতে না পারার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও ইট কীভাবে তৈরি করে– এমন গুরুতর প্রশ্ন করতে পারিনি। তৈরি পোশাক খাতে কীভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়, সেটিও আমরা জিজ্ঞেস করতে পারিনি।
শফিকুল আলম বলেন, পত্রিকায় দুই দিন পরপর খবর আসে, অমুক ফ্যাক্টরি গ্রীন হয়েছে, এখন ২১৫টি গ্রীন ফ্যাক্টরি আছে। আসলেই কী এগুলো ‘গ্রীন’? আমি দুই একটি গ্রীন ফ্যাক্টরি চিনি যেগুলো নদীর কিনারে। এগুলো কেমন গ্রীন ফ্যাক্টরি? তারা কী সত্যই গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে গ্রীন হচ্ছে? নাকি একটি এজেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে এবং তারপর কী হচ্ছে কেউ জানতে চাচ্ছে না!
এগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা দায়িত্ব মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেক বছর ধরেই আমরা বড় বড় শিল্পকে মুখোমুখি করতে পারিনি। তাদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ‘কর্মসংস্থান’ তৈরি, আর তা শোনার পরই প্রশ্ন করা বন্ধ হয়ে যায়। এটি অনেক বছর ধরে উন্নয়নের ন্যারেটিভ হয়ে আছে। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিবেশবিধি মেনে করা হয়েছে কিনা, এসব প্রকল্পে যারা কাজ করেছে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, প্রকল্প এলাকার আশেপাশে থাকা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা…। অনেক প্রশ্ন করার আছে, উন্নয়ন অনেক বড় বিষয়।