
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে জুলাইয়ে বাংলাদেশ জোরপূর্বক গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে সংস্থাটির এক রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়, সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রচেষ্টা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ইলেইন পিয়ারসন বলেন, এখনো পর্যন্ত আপনি যে অগ্রগতি করেছেন আমরা তার প্রশংসা করি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সময়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে।
র্যাব বিলুপ্ত করার সুপারিশ তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, গুম ও হত্যার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। এখানে জবাবদিহিতা থাকা জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের যে প্রচেষ্টা ছিল। গত ১৬ বছর আপনাদের প্রতিবেদনগুলোতে ১৬ বছরের একনায়ক শাসনামলের ব্যাপক অপরাধ উন্মোচনে সহায়ক হয়েছে।
তিনি বলেন, র্যাব তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ‘বিচারের মুখোমুখী হতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।
পিয়ারসন বলেন, ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং তারা শাসক দলের ক্যাডারের মতো আচরণ করত। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সমস্ত সংস্কার সুপারিশ প্রকাশ করছি এবং জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নির্ধারণের সুযোগ দিচ্ছি। ১৬ বছরের দমন-পীড়ন এবং অপরাধের ক্ষতি পূরণ করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হবে।
এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনা বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া প্রধান ঢাকা সফরকালে সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, সংস্কারগুলোকে দৃঢ় করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে যথাযথ নজরদারির আওতায় আনতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি রাখাইনে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার রোহিঙ্গার জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ‘নিরাপদ অঞ্চল’-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।