জাতীয়রাষ্ট্র
ট্রেন্ডিং

ভারত সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশের ১০ দফা সিদ্ধান্ত

আগামী ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লিতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৫তম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সম্মেলন সামনে রেখে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সীমান্ত সংক্রান্ত দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, দফতর এবং সংস্থার সমন্বয়ে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ফয়সল হাসান জানান, সভায় সীমান্ত হত্যা, শূন্য লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন, নদী থেকে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং নদী তীর সংরক্ষণমূলক কাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তের সব সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

১০ দফা সিদ্ধান্ত হলো—
* বিএসএফ, ভারতীয় নাগরিক, ভারতীয় দুষ্কৃতকারীরা সীমান্ত হত্যা, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো ও আহত করা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া ও আটক বন্ধ করতে হবে।

* বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের সীমানা লঙ্ঘন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ ও বন্ধ করতে হবে।

আরো পড়ুন

* সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারতের অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণকাজ এবং বিএসএফের বাধায় বন্ধ থাকা বাংলাদেশ পার্শ্বের উন্নয়নমূলক কাজ নিষ্পত্তি করতে হবে।

* আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয়। এমন চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন করতে হবে।

* বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন, নদী হতে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্ত করতে হবে।

* বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিক ও দুষ্কৃতকারীদের আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে।

* বিতর্কিত মুহুরির চর এলাকায় সীমানা নির্ধারণ, বিভিন্ন এলাকায় বর্ডার পিলারে স্থাপনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।

* বাংলাদেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।

* সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করতে হবে।

* পারস্পারিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।

সভা শেষে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও নাগরিকরা সীমান্তে নিরস্ত্র-নিরীহ বাংলাদেশিদের ওপর হামলা ও গুলি চালানোসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, অনেক সময় বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকরা কৃষি কাজ করা অবস্থায় বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যায়। এসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবং স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সমুন্নত রেখেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি’র প্রতিনিধি ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর এবং যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের মধ্যে মোট ৪টি চুক্তি রয়েছে। চুক্তিতে উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্য লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনও উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে-অপরের সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button