
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তাদের অপরাধের বিচার করা না হলে দেশের মানুষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমা করবে না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য ন্যাশনাল’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটের (ডব্লিউজিএস) ফাঁকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের মুখোমুখি করা হবে। আমরা ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার বিপুল পরিমাণ প্রমাণ আছে। যার মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টও অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ এটিকে নথিভুক্ত করেছে এবং আমাদের কাছে শেখ হাসিনা, তার সরকার এবং ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের অপরাধের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং আশা করছি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এটি অবশ্যই করা হবে, অন্যথায় জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমিরাতের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমি প্রধান উপদেষ্টা হবার পর আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কাছে দেশটিতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি আন্দোলনকারীদের ক্ষমা করে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা করায় আমি অত্যন্ত খুশি হই। এটি একটি অসাধারণ পদক্ষেপ ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিকে সচল করা। আমরা রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনা করছি- কোন সংস্কার এখন বাস্তবায়ন করা হবে, কোনটি ভবিষ্যতে হবে এবং কোন সংস্কার প্রস্তাব তারা গ্রহণ করতে চান না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটাই আমাদের সরকারের কাজের সীমা। এরপর আমরা ১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করবো। জনগণ এটিকে উদযাপন করবে এবং আমাদের কাজ শেষ হবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ও আওয়ামী লীগের লোকজন প্রায় ১,৪০০ জনকে হত্যা করে এবং আহত হয় ১১ হাজার। আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ১৩ শতাংশ ছিল শিশু। এই সহিংসতায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যেই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিলে টানা ১৫ বছরের একদলীয় শাসনের অবসান হয়। এরপর গতবছর ৮ আগস্ট নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।